চুল বাঁধার ধরন-
সাজের অন্যতম অংশ হল চুলের সাজসজ্জা। তাই স্টাইল (hairstyle) এমন করুন, যা সব পোশাকের সঙ্গে মানিয়ে যায়। চুলের ফ্যাশন বদলে যায় সময়ের সঙ্গে সঙ্গে। আর তাই কখনো দেখা যায়, মেয়েদের চুল কাঁধ পর্যন্ত। কখনো পিঠ ছাপিয়ে নেমে গেছে কোমর পর্যন্ত। আবার কখনো একদম খাটো চুলে নতুন কোনো ঢঙে। গোছানো তবে একটু অগোছালো চুলেই যেন স্বস্তি এখনকার তরুণীদের। চুল বাঁধায় এখন এই ধারাই বেশ জনপ্রিয়। বেণি, ঝুঁটি ও খোঁপা—চুল বাঁধার ধরন তিনটাই এ সময়ে বেশ চলছে। তবে বৃষ্টির ছাঁট কিংবা মাটি-ভেজা গন্ধের বাতাসে চুল খোলা রাখতে ইচ্ছে করে। সেখানেও অবশ্য চাইলে চুলে হালকা বাঁধন থাকতে পারে। নারী হোক বা পুরুষ, মানুষের সৌন্দর্যের সঙ্গে, ব্যক্তিত্বের সঙ্গে জড়িয়ে আছে চুল। চুল শূন্য মাথার বাস্তবতা থাকলেও সে দৃশ্য আমাদের খুব একটা শান্তি দেয় বলে মনে হয় না। তাই চুল থাক আমাদের মাথায়। চুলের যে বর্ণাঢ্য ও বর্ণিল চর্চার ভুবন সেটাও অক্ষুণ্ন থাক যুগ যুগ। এই সময়ের জনপ্রিয় কয়েকটি দুর্দান্ত চুল বাঁধার ধরন এর হদিশ নিচে দেয়া হলোঃ-
পনিটেলঃ
গরমে একটু উঁচু করে চুল বাঁধতে চাইলে পনিটেল সবচেয়ে সহজ উপায়। অপেক্ষাকৃত গোল মুখের সঙ্গে পনিটেল বেশি ভালো লাগে। নানা নামে পনিটেলের আছে রকমফের। ছোট কাঁকড়া ক্লিপ বা পাঞ্চ ক্লিপ দিয়ে কিছু চুল আটকে পুরো চুলটা পনিটেল করে রাখা যায়। আবার সব চুল টেনে উঁচু করে পনিটেল করতে পারেন।
ডোনাট বানঃ
একপাশে নিচু করে করা হয়েছে ডোনাট বানটি। দুপুরের কোনো আয়োজনে শাড়ির সঙ্গে ভালো মানাবে।
ঝুঁটিতে সারা দিনঃ
সামনের দিকের কিছুটা চুল আলাদা করে রাখুন। মাঝে সিঁথি করে নিন। এবার ঝুঁটি করে ফেলুন বাকি চুল দিয়ে। ঝুঁটি নিচু করে বাঁধতে হবে। বাঁধার আগে মাথার পেছনের অংশের কিছুটা জায়গা ব্যাক কম্ব করে একটু ফুলিয়ে নিন। এবার সামনে আলাদা করে রাখা চুলগুলো দিয়ে চিকন বেণি করে ফেলুন। সিঁথির দুই পাশে আলাদাভাবেই দুটি বেণি করতে হবে। বেণিগুলো গিয়ে ঝুঁটির সঙ্গে আটকে দিন। রাবার ব্যান্ডের জায়গাটুকু এই বেণি দিয়েই ঢেকে দিতে পারেন।
ব্যাংগস খোঁপাঃ
সামনের দিকে যাঁদের ব্যাংগস করা, তাঁদের জন্য এই খোঁপা। ওপরের দিকে ঝুঁটি করে নেওয়া হয়েছে প্রথমে। এবার খোঁপার আদলে চুল আটকে নিন রাবার ব্যান্ড বা কাঁটা দিয়ে। খোঁপার চারপাশে আলগা বেণি আটকে নিতে পারেন। বা চাইলে নিজের চুল দিয়ে বেণি করে আটকে দিতে পারেন।
হালকা কোঁকড়াঃ
সামনের চুল হালকা পাফ করে নেওয়া হয়েছে। আঁচড়ে মাঝে সিঁথি করে নিন। এবার সামনের অংশের অল্প কিছু চুল টুইস্ট করে নিন। একটু আলগা করেই মাথার পেছনে নিয়ে ক্লিপ দিয়ে আটকে নিন। নিচের খুলে রাখা চুলগুলো হালকা কোঁকড়া করে নেওয়া হয়েছে। দাওয়াতে মানাবে ভালো।
খোলা চুলে বেণিঃ
একপাশে তিনটা চিকন বেণি করে একসঙ্গে আটকে দেওয়া হয়েছে। পাশ্চাত্য পোশাকের সঙ্গেই বেশি ভালো মানাবে।
খোঁপাঃ
পুরো চুল ভালোভাবে আঁচড়ে নিন। এবার সামনে থেকে ছোট ছোট ভাগে চুল নিয়ে টুইস্ট করুন। শেষে সম্পূর্ণ চুল নিয়ে পেঁচিয়ে খোঁপা করে নিন। সঙ্গে দিন সাদা জিপসি ফুল। চাইলে সামনে কিছু চুল বের করে রাখতে পারেন।
টুইস্ট লেয়ারেঃ
পুরো চুল প্রথমে পাফ করে নিন। একপাশে সিঁথি করতে পারেন। এরপর একটু অগোছালোভাবেই চুলগুলো টুইস্ট করে লেয়ার স্টাইলে পরপর আটকে নিন ক্লিপ দিয়ে। পেছনে ফ্রেঞ্চ খোঁপার সঙ্গে আটকে দেওয়া হয়েছে সামনের দিকের টুইস্ট করা চুলগুলো। গাউন, অফ শোল্ডারের সঙ্গে ভালো যাবে জমকালো এই চুলের স্টাইলটি।
কোঁকড়ানো চুলেঃ
চুল এক পাশে সিঁথি করে নিন। বেশির ভাগ চুল সামনে থেকে আলতো হাতে বেণি করে কানের পেছন পর্যন্ত নিয়ে আসুন। এবার ক্লিপ দিয়ে আটকে নিন। জারবেরা বা গোলাপ লাগাতে পারেন। চাইলে পেছনের চুল খোলা অথবা বেণি করে সামনে এক পাশে নিয়ে আসুন। কোঁকড়ানো চুলে বেশ মানিয়ে যাবে এই স্টাইল।
এলিগেন্ট ব্রেইডঃ
চুল খোলা রাখতে চান অথচ চান না জট না পড়ুক। তাহলে এলিগেন্ট ব্রেইড করতে পারেন। মাথার দু’পাশ থেকে এক গোছা করে চুল নিন। বিনুনি করে পিছনের দিকে নিয়ে যান। একটা ক্লিপ বা কিছু দিয়ে আটকে দিন। নীচের চুল খোলাই থাকবে।
সাইড ব্রেইডঃ
ছুটির দিনে ফুরফুরে মেজাজে লং ড্রাইভের জন্য তৈরি? চুলের স্টাইলে একটা বোহেমিয়ান লুক আনা যাক তাহলে। ব্রেইড স্টাইল এখন ট্রেন্ডি। তাই ক্যাজুয়াল পোশাকের সঙ্গে সাইড ব্রেইড করে নিন। লম্বা চুলে স্বচ্ছন্দ এবং খুব বেশি এক্সপেরিমেন্ট না করতে চাইলে দিব্যি কাজ চালিয়ে নিতে পারেন। গোড়া থেকে আলগা বিনুনি, একেবারে নীচে পর্যন্ত। চাইলে মাথার মাঝখান থেকেও বিনুনি করা যায়। তবে এটি খাঁটি ভারতীয় লুক। জিন্সের সঙ্গে তো যায়ই না। ফিউশন কুর্তির সঙ্গেও বিনুনি না করাই ভাল।
চুলের সঙ্গে পুরুষের সম্পর্ক থাকলেও চুলের প্রসঙ্গে জেগে ওঠে ‘কুচবরন কন্যার মেঘবরন চুল’ চিত্রকল্প। এই চিত্রকল্প আজকের নয়, ঐতিহাসিক কালের। সে জন্য চুলের কথা উঠলেই মনে পড়ে ‘ঢালুয়া খোঁপা’ আর দীঘল কালো চুলের নারীদের কথা।